২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এরদোগান-ট্রাম্প নতুন সমীকরণে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রজব তাইয়েব এরদোগান  - ছবি : সংগৃহীত

তুরস্ক মার্কিন ধর্মযাজক রিভারেন্ড অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে মুক্তি দেয়ার কারণে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পথে একধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। ধর্মযাজকের মুক্তি দু’টি ঐতিহাসিকভাবে মিত্রদেশের মধ্যকার সম্পর্কের নজিরবিহীন উত্তেজনার অবসান ঘটাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিকে ধর্মযাজককে মুক্তি দেয়া নিয়ে তুরস্কের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। যাজক ব্রানসনকে মুক্তি দেয়ার কয়েক দিন পর এ কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে আলোচনার পর সম্প্রতি এই মন্তব্য করেন মাইক পম্পেও। তাহলে কি সত্যি সত্যিই আঙ্কারা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে?

অবশ্য ব্রানসনের মুক্তির কারণে আমেরিকা ও তুরস্কের মধ্যকার কিছু চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনার পথও উন্মুক্ত হলো। মার্কিন মিডিয়ায় ইতোমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মধ্যে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়- সেই বৈঠকেই একটি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্কের ওপর থেকে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ধর্মযাজক ব্রানসনের মুক্তির কথা রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প এটা অস্বীকার করেন।


তুর্কি মিডিয়া এবং রাজনৈতিক সার্কেলে অবশ্য উল্লেখ করা হয় মানবিক চুক্তি বাস্তবায়নের বিনিময়েই ব্রানসনকে মুক্তি দেয়া হয়। আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ব্রানসনের মুক্তির সাথে চুক্তির বিষয়টি সম্পর্কিত বলে ইঙ্গিত দেন। ব্রানসনের মুক্তির প্রাক্কালে এরদোগান বলেন, মানবিক চুক্তি ‘বিলম্বিত হয়েছে- তবে চুক্তিটির মৃত্যু হয়নি।’ তিনি গত ৪ জুন আঙ্কারার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও এবং তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসুগ্লুর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

ধর্মযাজক ব্রানসন সন্ত্রাসের অভিযোগে তুরস্কের ইজমির প্রদেশে গৃহবন্দী ছিলেন। তুরস্কের কয়েকজন রাজনীতিবিদ যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে বলে অতিরিক্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছিরেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) প্রধান দেভলেভ বাসিলি আভাস দেন, এই চুক্তিতে সাড়া দিয়ে ওয়াশিংটন তুর্কি ব্যাংকার মেহসেত হাকান আটিলাকে মুক্তি দেবে। উল্লেখ্য, হাকানকে ইরানি মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ৩২ মাসের জেল দেয়া হয়। কারারুদ্ধ হওয়ার আগে তিনি একটি ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো চুক্তির বিষয় নাকচ করে দিয়েছে।

আঙ্কারা অবশ্য আশা করে, আমেরিকা তুরস্কের বিচারমন্ত্রী আবদুল হামিদ গুল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সুলুর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং তুরস্কের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। এ ছাড়াও তুরস্ক থেকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ক্ষেত্রে দ্বিগুণ কর আরোপের সিদ্ধান্তও বাতিল করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। দ্বিগুণ কর প্রত্যাহার করলে তা তুর্কি অর্থনীতি এবং তুর্কি লিরার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

ব্রানসনের মুক্তিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। নভেম্বরের মিডটার্ম নির্বাচনে ধর্মযাজক ব্রানসনের মুক্তি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করেন। কারণ, ওই ধর্মযাজকের অনেক ভক্ত এবং অনুরাগী মধ্যমেয়াদি এই নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন। কট্টরপন্থী ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানেরা এই ধর্মযাজকের অনুসারী। ব্রানসনের মুক্তির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান এবং এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে ভালো, সম্ভবত একটি মহান সম্পর্ক স্থাপিত হবে।’

ধর্মযাজকের মুক্তিদানের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যে মতপার্থক্য ছিল তা কি কাটিয়ে ওটা যাবে? এসব মতপার্থক্যের মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার কুর্দি ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন- যে সংগঠনটিকে তুরস্ক নিষিদ্ধ পিকেকের সিরীয় বাহু বলে মনে করে।

আমেরিকা সিরিয়ায় তুর্কি সরকারের কৌশলগত অবস্থানের বিরোধী। আবার সিরীয় সরকারের আচরণ ও রীতিনীতির প্রতি মার্কিন রাজনীতিবিদেরা অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। তাদের ওইসব অনিয়ম ও আচরণের কারণে দেশটিতে সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে আঙ্কারা মনে করে।

সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে তুরস্কের একটি যুদ্ধবিমানের হামলায় একটি রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার পর যখন রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন আঙ্কারা মনে করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব তুরস্কের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে। দুই বছর আগে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ব্যাপারে আমেরিকার অস্পষ্ট অবস্থান দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। পেনসিলভানিয়ায় বসবাসরত ফতেহ উল্লেহ গুলেনকে আঙ্কারার কাছে হস্তান্তরে ওয়াশিংটনের অস্বীকৃতির কারণেও দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কারণ, এরদোগান এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পেছনে গুলেনের হাত আছে বলে মনে করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ এবং খুনের অভিযোগ তদন্তের জন্য অতি সম্প্রতি তুরস্কে আকস্মিক সফর করেন। সফরের সময় তিনি তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথেও কথা বলেন। এরদোগানের সাথে আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রানসনকে মুক্তি দেয়ার পর তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা রাখার যৌক্তিকতা নেই।

সুতরাং মার্কিন ধর্মযাজক ব্রানসনকে মুক্তিদানের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের ওপর থেকে মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে মার্কিন-তুরস্ক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকায় সম্পর্ককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা জানি, শুধু সিরিয়া নয়, ইসরাইল ও ইরানের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক এবং সাথে সাথে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক এবং রাশিয়া-ইরান-তুরস্ক এই ত্রয়ী শক্তির রাজনৈতিক সমঝোতা তুর্কি-মার্কিন সম্পর্কের ওপর ছায়াপাত করেছে। এগুলো হলো উত্তেজনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। তাই ব্রানসনের মুক্তির মাধ্যমে কেবল আঙ্কারা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য দূর হবে, এটা আশা করা ঠিক হবে না। তবে বলা যায়, দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। রাজনৈতিক বিবেচনার সাথে সাথে ইরান হচ্ছে তুরস্কে গ্যাস ও তেল সরবরাহকারী একটি দেশ। তুরস্কের পক্ষে ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল